Advertisement

Advertisement
Foodপ্রযুক্তিবাংলাদেশরাজনীতিলাইফস্টাইলশিক্ষা

ভিজিটিং কার্ডে জন্মাবে গাছ!

Monday, January 20, 2020, January 20, 2020 WAT
Last Updated 2020-07-15T11:25:09Z


আপনার বা আমার ভিজিটিং কার্ড, বিভিন্ন অনুষ্ঠানের নিমন্ত্রণপত্র অথবা লিফলেট। এগুলো ব্যবহার বা কাজ শেষে সাধারণত ফেলে দেই। আর তা হয়ে যায় বর্জ্য কাগজ। কিন্তু সেই বর্জ্য কাগজ থেকে যদি জন্মায় গাছ? তাহলে কেমন হয়। বিষয়টি অকল্পনীয় বা অসম্ভাব্য বলেই মনে হবে। কিন্তু  বাস্তবে ফেলে দেওয়া এসব কার্ড থেকে গাছ জন্মানোর অভাবনীয় প্রকল্প উদ্ভাবন করেন নারায়ণগঞ্জের ছেলে প্রকৌশলী মাহবুব সুমন। যা নিজ চোখে না দেখলে বিশ্বাস-ই হবে না। আপনার আমার কাগজে তৈরি ভিজিটিং কার্ড বা যে কোনো ধরনের নিমন্ত্রণপত্র মাটিতে ফেললেই ১ বা দুটি নয় বিভিন্ন জাতের ১১টি সবজি ও ফুলের গাছ জন্মাবে। শুধু তাই নয় পরিবেশ সুমনের ঘরে রয়েছে বাঁশের তৈরি জগ, জৈব সার তৈরির নানা পরিবেশবান্ধব সামগ্রী। পরিবেশ রক্ষার কথা মাথায় রেখে দীর্ঘদিনের গবেষণা ও পরীক্ষা শেষে এ আবিষ্কার বাস্তবে রূপ দিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘শালবৃক্ষ’ নামে একটি ফেসবুক পেজ রয়েছে এ বন কাগজের। ইতিমধ্যে সুদূর আামেরিকা থেকে নাগরিক বন কাগজের একটি অর্ডারও নিয়েছেন। সরকারি উদ্যোগ বা সহযোগিতা পেলে এ বন কাগজ হয়ে উঠতে পারে পরিবেশ রক্ষার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
 
প্রকৌশলী সুমনের শুরুর জীবন নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা আবুল খায়েরের তিন ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে তিনি মেজো ছেলে। পড়াশোনা করেছেন ঢাকার প্রাইভেট ইউনাইটেড ইউনিভার্সিটিতে। সেখান থেকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করেছেন। বর্তমানে তিনি প্রকৌশলী ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিবিষয়ক গবেষক ও অ্যাক্টিভিস্ট।  এর আগে সৌরবিদ্যুৎ, বায়োবিদ্যুৎ, বায়োপ্লাস্টিক ও সরকারি বিভিন্ন প্রজেক্টে ম্যানেজার হিসেবে কাজ করেছেন।
 
কীভাবে এ চিন্তা ও শালবৃক্ষ টিম
Advertisement
কাগজের জন্ম গাছ থেকে। সে ক্ষেত্রে চিন্তা করি। সেই কাগজকে কীভাবে পুনরায় গাছে ফিরিয়ে দেওয়া যায়। এ ছাড়া আমরা যে কাগজ ব্যবহার করি। লেখালেখি শেষে কাগজের প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে একপর্যায়ে তা ফেলে দেই; যা বর্জ্যে পরিণত হয়। সে ক্ষেত্রে গবেষণা শুরু করি এ বর্জ্য কাগজকে কীভাবে পরিবেশ রক্ষার সম্পদে পরিণত করা যায়। সুমন বলেন, ‘বন কাগজ তৈরির কাজটি অনেক কঠিন। আমার একার পক্ষে  কাজটি শেষ করা সম্ভব হতো না। পুরো কাজটিতে সহায়তা করেছেন ইকরামুন্নেসা চম্পা। চম্পা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রী। 
 
বন কাগজ প্রকল্প
সুমন বলেন, ‘এ কাগজটি মাটিতে ফেলে দিলে সেখান থেকে জন্মাবে ১১ রকমের ফসল!  প্রায় এক বছরের প্রচেষ্টার পর জনসমক্ষে বন কাগজ সামনে এনেছেন তারা। এ বন কাগজ তেরির আইডিয়া, গবেষণা, পরীক্ষাসহ কাজটি সফলভাবে শেষ করে আনতে এক বছর সময় লেগেছে।
 
যেভাবে জন্মাবে গাছ
বন কাগজে ৮ রকমের সবজি, ফল আর তিন রকমের ফুলের বীজ আছে। রোপণের বিশেষ কোনো নিয়ম নেই। মাটির ওপর কাগজটা আস্ত অথবা ছিঁড়ে কুটি কুটি করে ফেলে দিলেই হলো। সেই মাটিতে যদি পর্যাপ্ত আর্দ্রতা থাকে তাহলে ৮-৯ দিনের মধ্যে গাছ দেখা যাবে। আর মাটি আর্দ্র না হলে কাগজটাকে মাটির ওপর রেখে একটু ভিজিয়ে দিলেই হলো। জমিতে যেমন সবজির বীজ ছিটিয়ে দেওয়া হয় তেমনই। ওপরে থেকেই আলো, বাতাস আর পানির সাহায্যে এটাতে অঙ্কুরোদ্গম হয় এবং পাখি খেয়ে না ফেললে সেটা থেকে গাছ বড় হতে থাকে। এ বন কাগজ থেকে জন্মাবে বিলাতি ধনিয়াপাতা, লালশাক ও  তিন জাতের শাক, পিয়াজ, মরিচ, দুই জাতের টমোটো ও ফুলের মধ্যে মোড়ক ফুল, কসমস, ডেইজি, ডিয়ানথুস ও হেলিক্রিসমাসসহ ১১ জাতের বৃক্ষ। একটি বন কাগজ এক বছর পর্যন্ত ভালো থাকে। অর্থাৎ একটি বন কাগজের ভিতরে থাকা বীজ এক বছর পর্যন্ত সতেজ থাকবে। এক বছরের ভিতর এটি মাটিতে  ফেললে ফসল হবে।